Jul 19, 2014

হে জীবনস্বামী




 তখন সবে পূজনীয় স্বামী গহনানন্দজী মহারাজ যোগদ্যান থেকে বেলুড় মঠ গেছেন তাঁর জায়গায় এসেছেন পূজনীয় স্বামী গীতানন্দজী মহারাজ গহনানন্দজী মহারাজ ছিলেন সদা হাস্যময় তাঁর তুলনায় গীতানন্দজী মহারাজকে বেশ গম্ভীর লাগত তাই উনাকে বেশ ভয় পেতাম একদম প্রণাম করতে যেতে ইচ্ছা করত না

তারপর একদিন ঠাকুরের কৃপায় আমার দীক্ষার দিন ঠিক হল - গীতানন্দজী মহারাজের কাছে - ১৯শে আগস্ট ২০০৬ সেদিন থেকে তিনি গীতানন্দজী মহারাজ থেকে হয়ে গেলেন গুরুদেব - আমার গুরুদেব, আমার একান্ত নিজের, আপনার মানুষ। এবং অবাক কান্ড, কেন জানি, আর উনাকে আমার গম্ভীর মনে হত না। যেন এক ম্যাজিক! মনে হত গুরুদেবের মত এমন স্নেহপ্রবণ মানুষ বুঝি আর হয় না

প্রতি সন্ধ্যায় গুরুপ্রণামের পর যখন গুরুদেব চলে যেতেন, আমাদের সকলের দিকে মিষ্টি হেসে "ভালো থেকো, সুখে থেকো" বলতেন

তখন জীবনের এক কঠিন সময় দিয়ে যাচ্ছি। সেই সময় গুরুদেব ছিলেন একমাত্র আশ্রয়, আশা, ভরসা। সবাইকে অবাক করে দিয়ে কি এমন সুন্দরভাবে আমাকে উপদেশ দিয়েছেন, কি অদ্ভুত আধুনিক চিন্তাধারার পরিচয় পাওয়া গেছে সেই উপদেশে! সেই ভরসার ওপর নির্ভর করে আজ আমি জীবনের এই জায়গায় দাঁড়িয়ে। চাকরি থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি উত্থান-পতনে গুরুদেবের আশীর্বাদ পেয়েছি, গুরুদেবকে পাশে পেয়েছি। আমি না পারলেও গুরুদেব ঠিক আমার পাশে পৌঁছে গেছেন ঠিক সময়ে

খবর পেলাম, আজ সকাল ৯ঃ১০ মিনিটে গুরুদেব দেহ রেখেছেন। বয়েস হয়েছিল ৯০, শরীরও খারাপ ছিল অনেকদিন ধরেই। তবু তো তিনি ছিলেন। আমার সেই বিরাট নিশ্চিত ভরসা হয়ে। জীবনের যে কোন কঠিন পরিস্থিতি, বিপর্যয়ের মুখোমুখি দাঁড়ানোর জোর ছিলেন তিনি। আমার কাণ্ডারি ছিলেন তিনি। শেষ দেখাটুকু আর করা হল না। শেষ প্রণামটুকুও করতে পারলাম না। চিরকালের আপসোস রয়ে গেল - চিরজীবনের মত। আমি জানি, তবু এরপর আমার সব জীবনযুদ্ধে, জীবনানন্দে আমার গুরুদেব আমার জীবনস্বামী আমার পাশে থাকবেন তাঁর আশীষ নিয়ে

অন্ধকারের মাঝে আমায় ধরেছ দুই হাতে
কখন তুমি এলে, হে নাথ, মৃদু চরণপাতে?
ভেবেছিলেম, জীবনস্বামী, তোমায় বুঝি হারাই আমি -
আমায় তুমি হারাবে না বুঝেছি আজ রাতে।
যে নিশীথে আপন হাতে নিবিয়ে দিলেম আলো
তারি মাঝে তুমি তোমার ধ্রুবতারা জ্বালো
তোমার পথে চলা যখন ঘুচে গেল, দেখি তখন
আপনি তুমি আমার পথে লুকিয়ে চল সাথে।

No comments:

Post a Comment