Dec 29, 2011

তুমি আসবে বলে তাই

কানে  নিয়ে  অঞ্জন  দত্ত , বুকে  নিয়ে চাপা  কান্না  আর  পিছনে  ফেলে  নিজের  মা, বাবা, ভাই, বাড়ি.... আবার  আমার  শহর  ছাড়া, ঘর  ছাড়া | কার  জন্য , কিসের  উদ্দেশ্যে, কি  পাওয়ার  আশায়ে  -  কে  জানে? অজানা  পথ  ধরে, অজানার  দিকে  এগিয়ে  চলা  শুধু | কোলকাতার  বুক  ছেড়ে  উড়ে  যেতে  যেতে, কোলকাতার থেকে  দুরে  সরে  যেতে যেতে একবার, শেষবারের  মতো  গলা  বাড়িয়ে  কোলকাতাকে  দেখে  নেওয়া  - দু  চোখ  ভরে, মন - প্রান  ভরে | দেখতে  গিয়ে  দেখি  রোদ -ঝলমলে  আমার  কোলকাতা’টা  কি  সুন্দর !! নিন্দুকেরা  বলে  চারদিকে  নাকি  গিজগিজ করছে  বাড়ি | কিন্তু  ওরা  কি  দেখেনি  যে  সেই  বাড়ির  গায়ে  রোদ  পরে  কেমন  ঝকঝক  করছে ? নালা  হোক , কি ডোবা  হোক , অথবা  নদী  বা  পুকুর  - মেঘের  ফাঁক  থেকে  রোদ  পরে  কেমন  ঝলমল  করছে !!! যারা  কোলকাতা ছেড়ে  চলে  যায়ে, তারা  কি  পিছন  ফিরে  একবারও  ফেলে  আসা কোলকাতা 'কে  চেয়ে  দেখে ? দেখলেও  কি  করে  যে  তাকে  আর  ছেড়ে  যেতে  পারে !!! অন্ধ  তারা !! বোকা  তারা !! যারা  পিছন  ফিরে  দেখে , ভালোবেসে   ফেলে  কলকাতাকে. আর  তাই  বারবার  ফিরে  ফিরে  আসে | আর  অপেক্ষা  করে  একেবারে  ফিরে  আসার | কোলকাতা'টাও   বেশ  জানে  যে  আমরা  ফিরব  বলেই  চলে  যাই | তাই  যখন  আমরা  ফিরে  আসি, নিজেকে  কেমন  নীল - হলুদ  আলোয়ে  সাজিয়ে  রাখে | প্লেনটা  যখন  নামে , উঁচু  থেকে  যখন  উঁকি  মারি , আমার  উজ্জ্বল  রূপসী  শহরটাকে  দেখে  মন  ভরে  যায়, চোখ  জুড়িয়ে  যায়ে | ওদের  ওই   New York'গুলোর  থেকে  কিছু  কম  যায়ে  না  আমার  কোলকাতা. আমি  আবার মুগ্ধ  হই , প্রেমে  পড়ি আমার  এই  শহরটার | যে  আমি  চলে  গেলে  গেয়ে  ওঠে  - "শুধু  তুমি  চলে  যাবে , আমি  স্বপ্নেও  ভাবিনি "| আর  ফিরে  এলে  নেচে  ওঠে  - "তুমি  আসবে  বলে  তাই ...". নিজে  কত  সপ্ন  দেখে  জানিনা | কিন্তু  আমি  সপ্ন  দেখে  যাই  নিজের  ঘব্রে ফেরার | যেখানে  সেদিন  interview নিতে  গিয়ে  দেখি  মিশমিশে  কালো , রোগা , মাঝারি  চেহারা , বড়  বড়  চোখ  নিয়ে  এক  candidate এসেছে | আমার শহরের  হরিপদ !!! এক্কেবারে !!! সেই  হরিপদদের  ছেড়ে  এখন  আলিবাবাকে  খোঁজার  পালা  আমার | সান্ত্বনা  পুরস্কার আর  কি .....

পাঁচিল


চীনের মানুষ পাঁচিল গড়ে দেশ বাঁচাবে বলে,
আবার কোথাও পাঁচিল ওঠে দেশ ভাগেরই ছলে |
ভাঙতে ভাঙতে অনেক কিছুই, ক্লান্ত হয়ে থামি,
ভাঙা-গড়ার খেলায় মেতে পাঁচিল গড়ি আমি |
দেশ বাঁচানোর জন্য তো নয়, দেশ ভাঙতেও না,
নিজের ভিতর লুকিয়ে আছে, সবার অজানা |
শৈশব বেয়ে, কৈশোর ছুঁয়ে, যৌবনেরই শেষে,
জীবন স্রোতে বয়ে গেছি এদিক-ওদিক ভেসে |
চাওয়া-পাওয়ার লড়াই লড়ে কেবল হিসাব করা,
ঠিক-ভুলেরই খেলা খেলে হাজারবার মরা |
মরতে মরতে মরা ফুরায়, লড়তে লড়তে লড়া,
তখন শেষে শুরু করি শক্ত পাঁচিল গড়া |
বুদ্ধি বলে অনেক কিছুই, মন তো মানে না,
সারাক্ষণ এই যুদ্ধ চলে, ক্লান্ত দুজনা |
আজকে কঠিন পাঁচিল গড়া বুদ্ধি-মনের মাঝে,
আর তো কোথাও দ্বন্দ্ব নেই, শান্তি সকাল-সাঁঝে |
বুদ্ধি নিক বহির্জগত, আমি অবাধ্য এক কন্যে,
আমার মন সঙ্গী আমার, থাকল আমার জন্যে ||

Aug 12, 2011

শুধু তোমায়ে বিদায় দেব , আমি স্বপ্নেও ভাবিনি |

আজ  কোলকাতায় আর  ব্যাঙ্গালোরে  একসাথে  বৃষ্টি  পড়ল !!! এখানেও  কোলকাতার মতন  বৃষ্টি পরে, এখানেও মেঘলা  বিকেলে  চার  দিক  সোঁদা  মাটির  গন্ধে  ম  ম করে | কোলকাতার মত  এখানেও বৃষ্টি পড়লে  গাছ'গুলো  সবুজ  হয়ে  যায়, বাসের  পা'দানি  যায়  ভিজে | এক  ঝাঁক বন্ধু  কি  নিশ্চিন্তে  কফি  দোকানে  বসে  সুখ-টান দেয় | ঠিক  আমার  কোলকাতার মতন | হঠাত নাকে  আলু  কাবলির  গন্ধ 'ও  পাই . জানিনা  মনের (নাকি  নাকের ) ভুল  কিনা | বাইরে  থেকে  দেখতে  পাই উঁচু  ফ্ল্যাট বাড়িটার  জানলা  দিয়ে  আলো  জ্বলছে | নিশ্চই  আমার বাড়ির  মতনই  কারুর  মা, বাবা , ভাই , বোন  বেগুনি  আর  গরম  চা  খেতে  খেতে ছোটবেলার  স্মৃতির  ঝাঁপি   খুলে  বসেছে | কিন্তু  তবু  এই শহর  আমার না , আমার কোলকাতা  না এই শহর | ওই  বাড়িটাও  আমার বাড়ি  না | এখানে  আমার মা, বাবা, ভাই  নেই. রাস্তায়ে  এত  লোক  পা ভিজিয়ে , বৃষ্টি গায়ে  মেখে  দৌড়ে  চলেছে | কাউকে  আমি  চিনি  না | ওদের  কথা  আমি বুঝি  না, ভাষা  জানিনা | ভেজা  building'গুলোর  একটাও  আমার চেনা  না | এখানে  আমার শহীদ  মিনার , রবীন্দ্রসদন  নেই | নেই  বাইপাসের  ধারের  পুকুর'গুলো'ও | আমার  কোলকাতাযে  বৃষ্টি পড়লে এতক্ষণে  ওরা  নিশ্চই  ঝাপসা  হয়ে যেত  | কে  জানে , আমার কোলকাতার পথে  ঘাটে  কলেজ   ফেরা  তাজা  প্রান 'গুলো এখন  এই বৃষ্টি'তে  কি করছে | কে জানে  আমার মা, বাবা একা  একা বৃষ্টিতে  কি  ভাবছে | এখানে সব  আছে | এত  মানুষ  আছে | তবু  কারুর সাথে  প্রান খুলে  দুটি  কথা বলতে  পারব  না | তাদের  ছুঁতেও পারি না হাত  বাড়ালে | শুধু লোভী  চোখে  তাকিয়ে  আমার চেনা মুখ 'গুলো, building'গুলো, গাছ'গুলো, পুকুর'গুলো খুঁজি | চেনা  শব্দ  শোনার  জন্য  কান মরিয়া  হয়ে থাকে | আর  ভাবি.... কি ভাবি ? কে জানে | সে  অনেক  কথা | নিজেই  কি ছাই  অত  গুছিয়ে  জানি ? শুধু খুব  যে  কষ্ট  হয়ে বুকের  ভেতরে, তা  বুঝতে  পারি|

শুধু  তোমায়ে বিদায়   দেব , আমি স্বপ্নেও  ভাবিনি |

কিন্তু সেই কষ্টের মধ্যেও কেমন একটা আনন্দ আছে... কোলকাতা’কে ভালোবাসার আনন্দ, কোলকাতা’কে ফিরে পেতে চাওয়ার আনন্দ | রাতে যখন শুতে যাওয়ার আগে আয়নার সামনে নিজেকে দেখি, নিজেকে বিশ্বাসঘাতক মনে করে লজ্জা হয় না | নিজের শৈশব কে, কৈশোর’কে ভালবাসতে  পেরে গর্ব হয়ে |

ভালো থেকো সবাই | দুঃখ পেয়ো, লজ্জা পেয়ো না | মাথাটা শুধু উঁচু রেখো |

Aug 10, 2011

অগ্নীশ্বর

তুই  যে  আমার  পরম  বন্ধু  -  চরম  দুঃখে , মরম ব্যথায় 
তোকেই  বুকে  জড়িয়ে  ধরি  অজানা  কোন  সুখের  আশায় 
তুই যে  আমার স্বপ্ন  পূরণ  রুক্ষ  কঠিন  এই  দুনিয়ায় 
যেথায়ে   মিথ্যা  বাস্তবেতে  মনের  মানিক  কোথাযে  হারায়  
জানিস , তোকে  নাম  দিয়েছি , কোলে এলে  ডাকব  যখন 
ছোট্ট আঙুল বাড়িয়ে  দিবি  মুঠোয়  ভরে  ধরব  তখন .
 নিজের  যত  না  পাওয়া  সব , ফুরিয়ে  যাওয়া  ইচ্ছে  যত
ভরিয়ে  দেব  তোর  ঝুলিকে , সাজিয়ে  নিস  নিজের  মত .
জগতটা  যে সহজ  না রে , সাদা  মানেই  সাদা তো নয়ে ,
বেঁচে   থাকা  কঠিন রে খুব , লড়াই  করে  বাঁচতে  হয়  .
আগুন  দিয়ে  হাঁটতে  হবে , ঝলসে  যাবে  জীবন  খানিক ,
তাই  তো তুই  অগ্নীশ্বর , সাত  রাজার ধন  আমার মানিক.
ঝলসে  গেলেও  পুড়বি  না তুই, হোচট  খেলেও  হারবি  না যে
দুঃখ , আঘাত , বিপদ , বাধায়  থাকবি  সদা  হাসি  মুখে .
কিন্তু  তবু  বুক যে কাঁপে  , বল  দেখি  কোন ভরসাতে 
আনব  তোকে  প্রানে  ধরে  অসহ্য    এই পৃথিবীতে ?  
চোখ  মেলে  তুই দেখিস  যদি  মায়ের  কোল  ক্ষতয়ে  ভরা ,
কান  পেতে  তুই শুনিস  যদি দুষছে  মাকে  শুধুই  ওরা .
তবু  কি  তুই আসবি  ছুঁতে  , বসবি  তোর এই মায়ের কোলে?
ডাকবি  তবু মা  বলে  তুই? বাসবি  ভালো  তবুও  মাকে ?