কানে নিয়ে অঞ্জন দত্ত , বুকে নিয়ে চাপা কান্না আর পিছনে ফেলে নিজের মা, বাবা, ভাই, বাড়ি.... আবার আমার শহর ছাড়া, ঘর ছাড়া | কার জন্য , কিসের উদ্দেশ্যে, কি পাওয়ার আশায়ে - কে জানে? অজানা পথ ধরে, অজানার দিকে এগিয়ে চলা শুধু | কোলকাতার বুক ছেড়ে উড়ে যেতে যেতে, কোলকাতার থেকে দুরে সরে যেতে যেতে একবার, শেষবারের মতো গলা বাড়িয়ে কোলকাতাকে দেখে নেওয়া - দু চোখ ভরে, মন - প্রান ভরে | দেখতে গিয়ে দেখি রোদ -ঝলমলে আমার কোলকাতা’টা কি সুন্দর !! নিন্দুকেরা বলে চারদিকে নাকি গিজগিজ করছে বাড়ি | কিন্তু ওরা কি দেখেনি যে সেই বাড়ির গায়ে রোদ পরে কেমন ঝকঝক করছে ? নালা হোক , কি ডোবা হোক , অথবা নদী বা পুকুর - মেঘের ফাঁক থেকে রোদ পরে কেমন ঝলমল করছে !!! যারা কোলকাতা ছেড়ে চলে যায়ে, তারা কি পিছন ফিরে একবারও ফেলে আসা কোলকাতা 'কে চেয়ে দেখে ? দেখলেও কি করে যে তাকে আর ছেড়ে যেতে পারে !!! অন্ধ তারা !! বোকা তারা !! যারা পিছন ফিরে দেখে , ভালোবেসে ফেলে কলকাতাকে. আর তাই বারবার ফিরে ফিরে আসে | আর অপেক্ষা করে একেবারে ফিরে আসার | কোলকাতা'টাও বেশ জানে যে আমরা ফিরব বলেই চলে যাই | তাই যখন আমরা ফিরে আসি, নিজেকে কেমন নীল - হলুদ আলোয়ে সাজিয়ে রাখে | প্লেনটা যখন নামে , উঁচু থেকে যখন উঁকি মারি , আমার উজ্জ্বল রূপসী শহরটাকে দেখে মন ভরে যায়, চোখ জুড়িয়ে যায়ে | ওদের ওই New York'গুলোর থেকে কিছু কম যায়ে না আমার কোলকাতা. আমি আবার মুগ্ধ হই , প্রেমে পড়ি আমার এই শহরটার | যে আমি চলে গেলে গেয়ে ওঠে - "শুধু তুমি চলে যাবে , আমি স্বপ্নেও ভাবিনি "| আর ফিরে এলে নেচে ওঠে - "তুমি আসবে বলে তাই ...". নিজে কত সপ্ন দেখে জানিনা | কিন্তু আমি সপ্ন দেখে যাই নিজের ঘব্রে ফেরার | যেখানে সেদিন interview নিতে গিয়ে দেখি মিশমিশে কালো , রোগা , মাঝারি চেহারা , বড় বড় চোখ নিয়ে এক candidate এসেছে | আমার শহরের হরিপদ !!! এক্কেবারে !!! সেই হরিপদদের ছেড়ে এখন আলিবাবাকে খোঁজার পালা আমার | সান্ত্বনা পুরস্কার আর কি .....
Dec 29, 2011
পাঁচিল
চীনের মানুষ পাঁচিল গড়ে দেশ বাঁচাবে বলে,
আবার কোথাও পাঁচিল ওঠে দেশ ভাগেরই ছলে |
ভাঙতে ভাঙতে অনেক কিছুই, ক্লান্ত হয়ে থামি,
ভাঙা-গড়ার খেলায় মেতে পাঁচিল গড়ি আমি |
দেশ বাঁচানোর জন্য তো নয়, দেশ ভাঙতেও না,
নিজের ভিতর লুকিয়ে আছে, সবার অজানা |
শৈশব বেয়ে, কৈশোর ছুঁয়ে, যৌবনেরই শেষে,
জীবন স্রোতে বয়ে গেছি এদিক-ওদিক ভেসে |
চাওয়া-পাওয়ার লড়াই লড়ে কেবল হিসাব করা,
ঠিক-ভুলেরই খেলা খেলে হাজারবার মরা |
মরতে মরতে মরা ফুরায়, লড়তে লড়তে লড়া,
তখন শেষে শুরু করি শক্ত পাঁচিল গড়া |
বুদ্ধি বলে অনেক কিছুই, মন তো মানে না,
সারাক্ষণ এই যুদ্ধ চলে, ক্লান্ত দুজনা |
আজকে কঠিন পাঁচিল গড়া বুদ্ধি-মনের মাঝে,
আর তো কোথাও দ্বন্দ্ব নেই, শান্তি সকাল-সাঁঝে |
বুদ্ধি নিক বহির্জগত, আমি অবাধ্য এক কন্যে,
Aug 12, 2011
শুধু তোমায়ে বিদায় দেব , আমি স্বপ্নেও ভাবিনি |
আজ কোলকাতায় আর ব্যাঙ্গালোরে একসাথে বৃষ্টি পড়ল !!! এখানেও কোলকাতার মতন বৃষ্টি পরে, এখানেও মেঘলা বিকেলে চার দিক সোঁদা মাটির গন্ধে ম ম করে | কোলকাতার মত এখানেও বৃষ্টি পড়লে গাছ'গুলো সবুজ হয়ে যায়, বাসের পা'দানি যায় ভিজে | এক ঝাঁক বন্ধু কি নিশ্চিন্তে কফি দোকানে বসে সুখ-টান দেয় | ঠিক আমার কোলকাতার মতন | হঠাত নাকে আলু কাবলির গন্ধ 'ও পাই . জানিনা মনের (নাকি নাকের ) ভুল কিনা | বাইরে থেকে দেখতে পাই উঁচু ফ্ল্যাট বাড়িটার জানলা দিয়ে আলো জ্বলছে | নিশ্চই আমার বাড়ির মতনই কারুর মা, বাবা , ভাই , বোন বেগুনি আর গরম চা খেতে খেতে ছোটবেলার স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বসেছে | কিন্তু তবু এই শহর আমার না , আমার কোলকাতা না এই শহর | ওই বাড়িটাও আমার বাড়ি না | এখানে আমার মা, বাবা, ভাই নেই. রাস্তায়ে এত লোক পা ভিজিয়ে , বৃষ্টি গায়ে মেখে দৌড়ে চলেছে | কাউকে আমি চিনি না | ওদের কথা আমি বুঝি না, ভাষা জানিনা | ভেজা building'গুলোর একটাও আমার চেনা না | এখানে আমার শহীদ মিনার , রবীন্দ্রসদন নেই | নেই বাইপাসের ধারের পুকুর'গুলো'ও | আমার কোলকাতাযে বৃষ্টি পড়লে এতক্ষণে ওরা নিশ্চই ঝাপসা হয়ে যেত | কে জানে , আমার কোলকাতার পথে ঘাটে কলেজ ফেরা তাজা প্রান 'গুলো এখন এই বৃষ্টি'তে কি করছে | কে জানে আমার মা, বাবা একা একা বৃষ্টিতে কি ভাবছে | এখানে সব আছে | এত মানুষ আছে | তবু কারুর সাথে প্রান খুলে দুটি কথা বলতে পারব না | তাদের ছুঁতেও পারি না হাত বাড়ালে | শুধু লোভী চোখে তাকিয়ে আমার চেনা মুখ 'গুলো, building'গুলো, গাছ'গুলো, পুকুর'গুলো খুঁজি | চেনা শব্দ শোনার জন্য কান মরিয়া হয়ে থাকে | আর ভাবি.... কি ভাবি ? কে জানে | সে অনেক কথা | নিজেই কি ছাই অত গুছিয়ে জানি ? শুধু খুব যে কষ্ট হয়ে বুকের ভেতরে, তা বুঝতে পারি|
শুধু তোমায়ে বিদায় দেব , আমি স্বপ্নেও ভাবিনি |
কিন্তু সেই কষ্টের মধ্যেও কেমন একটা আনন্দ আছে... কোলকাতা’কে ভালোবাসার আনন্দ, কোলকাতা’কে ফিরে পেতে চাওয়ার আনন্দ | রাতে যখন শুতে যাওয়ার আগে আয়নার সামনে নিজেকে দেখি, নিজেকে বিশ্বাসঘাতক মনে করে লজ্জা হয় না | নিজের শৈশব কে, কৈশোর’কে ভালবাসতে পেরে গর্ব হয়ে |
ভালো থেকো সবাই | দুঃখ পেয়ো, লজ্জা পেয়ো না | মাথাটা শুধু উঁচু রেখো |
শুধু তোমায়ে বিদায় দেব , আমি স্বপ্নেও ভাবিনি |
কিন্তু সেই কষ্টের মধ্যেও কেমন একটা আনন্দ আছে... কোলকাতা’কে ভালোবাসার আনন্দ, কোলকাতা’কে ফিরে পেতে চাওয়ার আনন্দ | রাতে যখন শুতে যাওয়ার আগে আয়নার সামনে নিজেকে দেখি, নিজেকে বিশ্বাসঘাতক মনে করে লজ্জা হয় না | নিজের শৈশব কে, কৈশোর’কে ভালবাসতে পেরে গর্ব হয়ে |
ভালো থেকো সবাই | দুঃখ পেয়ো, লজ্জা পেয়ো না | মাথাটা শুধু উঁচু রেখো |
Aug 10, 2011
অগ্নীশ্বর
তুই যে আমার পরম বন্ধু - চরম দুঃখে , মরম ব্যথায়
তোকেই বুকে জড়িয়ে ধরি অজানা কোন সুখের আশায়
তুই যে আমার স্বপ্ন পূরণ রুক্ষ কঠিন এই দুনিয়ায়
যেথায়ে মিথ্যা বাস্তবেতে মনের মানিক কোথাযে হারায়
জানিস , তোকে নাম দিয়েছি , কোলে এলে ডাকব যখন
ছোট্ট আঙুল বাড়িয়ে দিবি মুঠোয় ভরে ধরব তখন .
নিজের যত না পাওয়া সব , ফুরিয়ে যাওয়া ইচ্ছে যত
ভরিয়ে দেব তোর ঝুলিকে , সাজিয়ে নিস নিজের মত .
জগতটা যে সহজ না রে , সাদা মানেই সাদা তো নয়ে ,
বেঁচে থাকা কঠিন রে খুব , লড়াই করে বাঁচতে হয় .
আগুন দিয়ে হাঁটতে হবে , ঝলসে যাবে জীবন খানিক ,
তাই তো তুই অগ্নীশ্বর , সাত রাজার ধন আমার মানিক.
ঝলসে গেলেও পুড়বি না তুই, হোচট খেলেও হারবি না যে
দুঃখ , আঘাত , বিপদ , বাধায় থাকবি সদা হাসি মুখে .
কিন্তু তবু বুক যে কাঁপে , বল দেখি কোন ভরসাতে
আনব তোকে প্রানে ধরে অসহ্য এই পৃথিবীতে ?
চোখ মেলে তুই দেখিস যদি মায়ের কোল ক্ষতয়ে ভরা ,
কান পেতে তুই শুনিস যদি দুষছে মাকে শুধুই ওরা .
তবু কি তুই আসবি ছুঁতে , বসবি তোর এই মায়ের কোলে?
Subscribe to:
Posts (Atom)